খতনা (মুসলমানী) নবীদের সুন্নাত
খতনাকে আমাদের দেশে মুসলমানী বলা হয়। খতনা ইব্রাহিম আ. জামানা থেকে এই সুন্নাত আমাদের পর্যন্ত চলে আসা ইসলামের অন্যতম একটি বিধান।
আমাদের মুসলিম সমাজে এ সংস্কৃতি শত শত বছর ধরে চলে আসছে। এটি একটি মহান সুন্নাত। যুগে যুগে বড় বড় নবী-রাসূল ও সুন্নাত পালন করেছেন। সর্বপ্রথম এ সুন্নাত পালন করেছেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। হজরত সাইদ ইবনে মুসাইয়াব (রহ.) থেকে বর্ণিত,হজরত ইব্রাহিম (আ.) হলেন খতনার সুন্নাত পালনকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৬৪৬৭)


খতনা নবীদের সুন্নত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) – এর পর সব নবী-রাসূল খৎনা করিয়েছিলেন। অনেক হাদিস শরিফে এ সুন্নাত পালনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতরাহ, অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব পাঁচটি-খতনা করা, নাভির নিম্নদেশে ক্ষুর ব্যবহার করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ খাঁটো করা। সহিহ বুখারি,হাদিস : ৫৮৮৯)

বয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তার খতনা করা জরুরী। নবমুসলিমকেও খতনা করে নিতে হবে। ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, কোন ব্যক্তি যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করত তখন সে বড় হলেও তাকে খৎনা করার আদেশ করা হত। (আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস: ১২৫২) খতনা উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রমাণ নেই। তাছাড়া এত গান-বাদ্য ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কোনো কিছু থাকলে তা তো সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে। (ফাতহুল বারী ১১/৯২,৯/৫০৩, ১০/৩৫৫,৪/৪১৩;রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫১-৭৫২/২৮২; খুলাসাতুল ফতাওয়া ২/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫-৯৬)


মাওলানা ইদ্রীস কন্ধলবী (রহ.) এর লিখিত সীরাতে মুস্তফা (সাঃ) এ আমাদের নবী করীম (সাঃ) খাতনা সম্পর্কে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। যথাঃ
এক, হুযুর খাতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন। হাকীম বলেন, এ সম্পর্কে এত অধিক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে সেগুলো মুতাওয়াতির – এর শ্রেণীভুক্ত হয়ে গেছে।
দুই, নবীজীর দাদা আব্দুল মুত্তালিব রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মগ্রহের সপ্তম দিনে তাঁর খাতনা করান। হযরত ইব্রাহীম ও ঈসমাঈল (আ.) – এর সুন্নাত ভুমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে তার খাতনা করানো। আরব দেশে তাই এই প্রথাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।


তিন, নবীজীর দুধমাতা হযরত হালীমা সাদিয়্যার প্রতিপালনে থাকাকালে তাঁর খাতনা করানো হয়। তবে এ শেষোক্ত মতটি নেহায়েত দুর্বল। সে তুলনায় প্রথমক্ত দুইটি মত গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ। তবে এ দুইটি মতে সামঞ্জস্য বিধান করাও সম্ভব। হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাতনকৃত অবস্থাতেই ভূমিষ্ঠ হয়েছেন এবং জন্মের সপ্তম দিনে আব্দুল মুত্তালিব তা পূর্ণভাবে সম্পাদনের ব্যবস্থা করেন।